কন্টেন্ট রাইটার বা ডেভেলপার [ Content Writer or Developer ] পেশায় কী আপনি আগ্রহী? তাহলে জেনে নিন এই পেশার বিস্তারিত।
কন্টেন্ট রাইটার বলতে মূলত একজন লেখককে বোঝানো হয়, বিভিন্ন বিষয়ে যিনি সৃষ্টিশীল লেখালেখি করেন। ডিজিটাল পৃথিবী এখ যোগাযোগনির্ভর হয়ে গেছে। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন জিনিসের কপি লেখা দরকার হয়। যেমন- বিজ্ঞাপনের কপি, বক্তৃতা, সংবাদ, প্রেস রিলিজ, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি। এরকম বিভিন্ন ধরনের লেখাকেই কপি রাইটিং বলে। সেই লেখাগুলো যারা লেখেন, তারা হলেন কপি রাইটার।
সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা অনলাইন বিভিন্ন বিষয়ের কন্টেট নিয়ে মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকে। তাই এই পেশায় যেতে হলে, লেখালেখি করার আগ্রহ থাকতে হবে আপনার। এছাড়া ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।
এক নজরে একজন কন্টেন্ট রাইটার:
সাধারণ পদবী: কন্টেন্ট রাইটার, কন্টেন্ট ডেভেলপার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
বিভাগ: মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন ও সেলস; গণমাধ্যম
প্রতিষ্ঠানের ধরন: প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ১ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন: ৳১০,০০০ – কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স: ২২-৩০ বছর
মূল স্কিল: আকর্ষণীয়ভাবে লিখতে পারা, গবেষণা করার দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: অনলাইনে লেখার পারদর্শিতা
একজন কন্টেন্ট রাইটার কোথায় কাজ করেন?
স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলে আপনি বেছে নিতে পারেন অনলাইন কোনো মার্কেটপ্লেস। যেমন: ফ্রিল্যান্সার বা ফিভারের মতো জনপ্রিয় সাইটগুলোতে কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
আজকাল বহু প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে কন্টেন্ট তৈরি করে। সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইনে এসব কন্টেন্ট প্রকাশ করে তারা। তবে এক্ষেত্রে কাজের সুযোগ এখনো সীমিত।
একজন কন্টেন্ট রাইটারের হিসেবে কীভাবে কাজ করবেন?
একজন কন্টেন্ট রাইটারের মূল কাজ লেখালেখি করা। লেখার ৩টি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রথমত যেই বিষয়ে কন্টেন্ট লিখবেন, সেই বিষয়ে পড়াশুনা করে জ্ঞানার্জন দরকার। এরপর লেখার সৃষ্টিশিল আঙ্গীক। যেকোনো বিষয় সৃষ্টিশীলভাবে পরিবেশন করাটা খুব জরুরি, তাই সেই বিষয়ে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এছাড়াও কন্টেন্ট রাইটারকে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট লেখার কারিগরি বিষয় জানতে হবে। যেমন- ওয়েব এর জন্য কন্টেন্ট লিখলে “কি-ওয়ার্ড” বিষয়ক এসইওর হিসেব নিকেশ বুঝতে হবে। আপনি চাইলে যে কোনো বিষয় নিয়েই লেখালেখি করতে পারেন। কিন্তু তার আগে সে বিষয় সম্পর্কে পড়াশোনা করে নেওয়া প্রয়োজন।
লেখার ধরন অনুযায়ী কন্টেন্ট রাইটার কয়েক ধরনের হতে পারেন। যেমন:
একজন কন্টেন্ট রাইটারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। তবে যে কোনো বিষয়ে স্নাতক পাশ হলে পরিচয় দিতে সুবিধা হয়। এ পেশায় ফুল-টাইম কাজ করা সম্ভব। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী হলে পার্ট-টাইম কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
টেলিভিশন আর প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক হতে চাইলে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা থাকা ভালো। তবে যেহেতু এটি একটি সৃজনশীল পেশা, সেহেতু পূর্ব অভিজ্ঞতা আর লেখার মানের উপর নির্ভর করে কাজ পাওয়া সম্ভব।
একজন কন্টেন্ট রাইটারের বয়স:
কন্টেন্ট রাইটার হবার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। তবে বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য কমপক্ষে ২২ বা ২৩ বছর বয়স হওয়া ভালো।
একজন কন্টেন্ট রাইটারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
তবে টেকনিক্যাল বিষয়ে লিখতে হলে, সে বিষয়ের উপর দীর্ঘমেয়াদি পড়াশোনা থাকা জরুরি। যেমন- ইতিহাসের ছাত্র হয়ে থাকলে মেডিকেল প্রযুক্তি নিয়ে লেখা আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হবে।
অনলাইনে কাজ করার জন্য কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (যেমনঃ ওয়ার্ডপ্রেস) আর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) নিয়ে ভালো ধারণা থাকলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাবে অনেক।
কীভাবে কন্টেন্ট রাইটিং শিখবেন?
কন্টেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রচুর পড়ালেখা করা, গবেষণা করা আর লেখালেখির চর্চা করা। লেখায় বৈচিত্র্য আনতে চাইলে বিভিন্ন লেখকের আর বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক ভিডিও দেখতে হবে। বিভিন্ন ভালো সাইটের কন্টেন্ট পড়ে বুঝতে হবে লেখক কীভাবে লিখেছেন।
কাজ শেখার জন্য ইন্টারনেট অন্যতম একটি মাধ্যম। বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম লেখালেখির উপর ফ্রি অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। এছাড়া আউটসোর্সিং সম্পর্কিত ডিপ্লোমা কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
একজন কন্টেন্ট রাইটারের মাসিক আয় কেমন?
কাজের ধরন, মাধ্যমের ধরন, কন্টেন্ট এর বিষয় ও ভাষার উপরে কন্টেন্ট রাইটারের মাসিক আয় নির্ধারিত হয়। যেমন- বিজ্ঞাপনের কপি লেখার আউটপুটের পরিমাণ কম, কিন্তু সৃষ্টিশীলতা আর সময় জরুরি। নেটিভ ভাষায় কপি লেখাপর পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় লিখতে পারলে সেক্ষেত্রে আয় বেশি হতে পারে। তাই সুনিদ্রিষ্ট করা বলা মুশকিল।
ফ্রিল্যান্স রাইটার হলে আপনার আয় নির্ভর করবে কাজের মান ও অভিজ্ঞতার উপর। আপওয়ার্কের (Upwork) ভালো লেখকরা ঘণ্টায় ১৫-৫০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।
একজন কন্টেন্ট রাইটারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টালগুলোতে এন্ট্রি লেভেলে কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে যোগ দিলে, পরে সিনিয়র রাইটার অথবা সাব-এডিটরের পদে উন্নীত হবেন। সবচেয়ে ভালো ক্ষেত্রে টিফ এডিটর হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন।
অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করলে ৪-৫ বছর পর মার্কেটিং ম্যানেজার বা সিনিয়র কপিরাইটারের পদ পাবার সুযোগ রয়েছে।
কন্টেন্ট রাইটিংয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে পদের কোনো ব্যাপার নেই। তবে পোর্টফোলিও অনেক ভালো হলে বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ আসতে পারে।