ক্যারিয়ার জীবনে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবশ্যই দ্রুত পরিবর্তন, অস্পষ্টতা, অনিশ্চয়তা এবং ক্ষয়প্রাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থার দ্বারা জর্জরিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমন্বয় এবং উন্নয়নমূলক, একাডেমিক এবং শেখার, এবং ক্যারিয়ারের উদ্বেগ থেকে শুরু করে ক্লিনিকাল-স্তরের মানসিক অসুস্থতা পর্যন্ত অসংখ্য ব্যক্তিগত এবং মানসিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। একটি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং অনিবার্যভাবে কর্মজীবন এবং বৃত্তিমূলক অন্বেষণকে অন্তর্ভুক্ত করে।কাউন্সেলিং ব্যক্তিদের অধ্যয়নের ক্ষেত্র নির্বাচন, ক্যারিয়ার বাছাই বা তাদের বর্তমান কাজ থেকে সহজতর বা বিচ্ছিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং বৈশিষ্ট্যের অনুসন্ধান, ক্যারিয়ারের স্বার্থের মূল্যায়নের সাথে মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সফল রূপান্তর বৃদ্ধি করে। শিক্ষার্থী -অনুষদের মিথস্ক্রিয়া সহজতর করা ক্যারিয়ার কাউন্সেলিংয়ের আরেকটি অপরিহার্য দিককে উপস্থাপন করে। এই ধরনের উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের পেশাগত মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে ইতিবাচকভাবে জড়িত।
ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, আক্ষেপসহ নানা কারণে মনের জোর কমে যায়। জীবনের বাধা পেরোতে চাই মনের জোর। মনের দুর্বলতা প্রকাশ পায় আমাদের দৈনন্দিন কাজে। মনের দ্বিধার কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি আমরা। মনের জোর বাড়াতে পারলে অনেক সাধারণ সমস্যা সহজেই কাটানো যায়। মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তোলা সত্যিকার অর্থে বেশ কঠিন শ্রমের কাজ। মনের জোরে চলতে পারি বলেই আমরা মানুষ। যেকোনো সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে ইতিবাচক জীবনযাপনে মনের বিকাশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আর্থিক ক্ষমতা কিংবা জোর যা-ই থাকুক না কেন, সতেজ মন জীবন কে সুন্দর করতে সাহায্য করে।
কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলুন
আপনার যখন কিছুর প্রয়োজন হবে তার গুরুত্ব বুঝে করে ফেলুন, দ্বিধা কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিন।
মোকাবিলা করতে শিখুন
আপনি যা এড়িয়ে চলবেন, তা আপনাকে বেশি বিপদে ফেলতে পারে। যেকোনো বিপদ বা সমস্যা সরাসরি মোকাবিলা করতে শিখুন। আপনি যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে ভয় পান, তাহলে সেই ভয় আপনাকে পরাজিত করবে। যেকোনো সমস্যাকে সরাসরি মোকাবিলা করুন।
ভুল স্বীকার করুন
জীবনে চলার পথে ব্যক্তিজীবন কিংবা কর্মক্ষেত্রে কোনো ভুল করলে তা স্বীকার করুন। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। কোনো কাজের ক্ষেত্রে ভুল হলে দোষ-ত্রুটি না খুঁজে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে পা বাড়াতে শিখুন।
বিনয়ী হোন
আপনার যখন সুসময়, তখন অবশ্যই বিনয়ী থাকবেন। সাধারণ মানুষ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না। আপনার সুসময় কিংবা দুঃসময়-সব সময়ই বিনয়ী হয়ে চলুন। নিজের ইগো ও ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক বিকাশে মনোযোগী হতে হবে।
বেশি বেশি শুনুন
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা কথা বলতেই বেশি পছন্দ করি। নিজের দৃঢ় মনন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোযোগী হয়ে শোনার অভ্যাস করুন। সবার কথা শুনুন। প্রয়োজনীয় মতামত দিন।
শিখতে সময় দিন
আপনার দুর্বলতা থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার জন্য শিখুন। শিখতে নিজেকে সময় দিন।
কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে জানুন
কর্মক্ষেত্রে আপনার ভুলের কারণে প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে, আবার আপনার চাকরি চলে যেতে পারে। সব সময়ই কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা রাখুন, এতে দায়িত্বশীলতা বাড়বে।
অন্যকে সম্মান করতে শিখুন
আপনার চেয়ে বয়সে কিংবা পদবিতে ছোট-বড় সবাইকে সম্মান দিন। তুই-তোকারি করে সম্বোধন সব সময়ই এড়িয়ে চলবেন। অন্যকে সম্মান দিতে শিখলে আপনার ইতিবাচক মননের প্রভাব প্রকাশিত হয়।
কৌতূহলী হোন
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই যে সব শিখে আসছেন, তা ভাববেন না। নিজে সব জানেন ও পারেন, এমনটা কখনোই মনে করবেন না। কৌতূহলী মন তৈরি করুন।
নিজের দুর্বলতা জয় করুন
দুর্বলতা কাটিয়ে সামনে চলা আর দুর্বলতা ছাপিয়ে সামনে চলা ভিন্ন বিষয়। আপনার দুর্বলতা কাটানোর দিকে মনোযোগ দিন। হয়তো শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারেন না। আজই চেষ্টা করুন দুর্বলতা কাটাতে। নিজের দুর্বলতাকে নিজের জন্য সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা হিসেবে কল্পনা করুন।
করোনা মহামারি তে সবার মন মানসিকতা বিপর্যস্ত
বিভিন্ন গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হলো এই লেখাটি; যে উপায়গুলো মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১। মেডিটেশন
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট ইয়োগা, ধ্যান শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।
২। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য যে আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৩। ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন
মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।
৪। বাস্তববাদী হওয়া
যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।
তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।
৫। নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন
অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে।
তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।
৬। ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিন
ক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে তোলে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন। কেননা এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে।
এমনকি জিরো-ক্যালরি বা চিনিহীন বলে বাজারজাত করা কোমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।
৭। তালিকা তৈরি করুন
আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দিবে।
৮। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
৯। প্রাণ খুলে হাসুন
সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়।
ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।
১০। ডায়েরি লিখুন
যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।
১১। পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে (Sound Sleep) ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ন।
এ কথা যেমন সত্যি যে, টেনশন মানুষের জীবনের স্বচ্ছন্দ গতি এবং স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটায়, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, জীবনে কিছু পরিমাণ টেনশন থাকা প্রয়োজন। কেননা, এই টেনশন জীবনের কাজ করার পেছনে উৎসাহ জোগায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে, কাজ করার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
—